নবীন শিক্ষার্থীদের বরণ, র্যালি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা ফলক (পুনঃস্থাপন) উন্মোচন, চারুকলা ও চিত্রকর্ম প্রদর্শনী, আলোচনা সভা, দোয়া মাহফিল, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় দিবস-২০২৪ উদযাপিত।
জুলাই বিপ্লবের চেতনাকে ধারণ করে ‘বিপ্লবে বলীয়ান নির্ভীক জবিয়ান’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বিভিন্ন আয়োজনের মধ্য দিয়ে ২০ অক্টোবর ২০২৪, রবিবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় দিবস-২০২৪ তথা ১৯তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপিত হয়। দিনব্যাপী অনুষ্ঠানসমূহের মধ্যে ছিল সংশ্লিষ্ট বিভাগ, ইনস্টিটিউট ও কেন্দ্রীয়ভাবে নবীন শিক্ষার্থীদের বরণ, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী র্যালি, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া কর্তৃক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা ফলক (পুনঃস্থাপন) উন্মোচন, চারুকলা ও চিত্রকর্ম প্রদর্শনী, আলোচনা সভা, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে শহিদদের স্মরণে ও আহত শিক্ষার্থীদের সুস্থতা কামনায় দোয়া মাহফিল, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের উদ্বোধন:
সকাল ৮টা.৩০ মিনিটে শহিদ মিনার চত্বরে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে জাতীয় পতাকা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা উত্তোলন করা হয়। পরবর্তীতে সকাল ১০টা ৩০মিনিটে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের শুভ উদ্বোধন করেন উপাচার্য অধ্যাপক মোঃ রেজাউল করিম, পিএইচডি। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিন, ইনস্টিটিউটের পরিচালক, চেয়ারম্যান, রেজিস্ট্রার, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, প্রভোস্ট, প্রক্টর, বিভিন্ন দপ্তরের পরিচালক, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ, সাংবাদিক প্রতিনিধিবৃন্দসহ অন্যান্য অতিথিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
র্যালি:
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোঃ রেজাউল করিম, পিএইচডি-এর নেতৃত্বে ব্যান্ডদলে সুসজ্জিত প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর র্যালিটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে শুরু করে রায়সাহেব বাজার মোড় ঘুরে, ভিক্টোরিয়া পার্ক পরিক্রমণ করে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। এসময় ছাত্র-ছাত্রীরা নানা রঙ-বেরঙের টি-শার্ট ও শাড়ি পরে নেচে গেয়ে র্যালিতে অংশগ্রহণ করেন।
এছাড়া বিভিন্ন অনুষদের ডিন, ইনস্টিটিউটের পরিচালক, চেয়ারম্যান, রেজিস্ট্রার, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, প্রভোস্ট, প্রক্টর, বিভিন্ন দপ্তরের পরিচালক, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ, সাংবাদিক প্রতিনিধিবৃন্দ নিজস্ব বিভাগীয় ব্যানারে র্যালিতে অংশগ্রহণ করেন।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা ফলক (পুনঃস্থাপন) উন্মোচন:
সকাল ১১টা ১০মিনিটে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া কর্তৃক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা ফলক (পুনঃস্থাপন) উন্মোচন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোঃ রেজাউল করিম, পিএইচডি।
এসময় ঘোষণা ফলক (পুন:স্থাপন) কমিটির আহবায়ক অধ্যাপক ড. মোঃ রইছ উদ্দীন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিন, ইনস্টিটিউটের পরিচালক, চেয়ারম্যান, রেজিস্ট্রার, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, প্রভোস্ট, প্রক্টর, বিভিন্ন দপ্তরের পরিচালক, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, উক্ত প্রতিষ্ঠানের জন্য জমিদানকারী জমিদার জগন্নাথ রায় চৌধুরীর বর্তমান বংশধরেরা, কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ, সাংবাদিক প্রতিনিধিবৃন্দসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
চারুকলা প্রদর্শনী ও আলোকচিত্র প্রদর্শনী এর উদ্বোধন:
সকাল ১১টা ১৫ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ সাজিদ একাডেমিক ভবনের (প্রস্তাবিত) নিচতলায় চারুকলা অনুষদের (ড্রইং এন্ড পেইন্টিং বিভাগ, প্রিন্টমেকিং বিভাগ ও ভাস্কর্য বিভাগ) উদ্যোগে ‘বার্ষিক শিল্পকর্ম ২০২৪’ প্রদর্শনী এবং ‘বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন ২০২৪’ শীর্ষক আলোকচিত্র প্রদর্শনী এর উদ্বোধন করেন উপাচার্য অধ্যাপক মোঃ রেজাউল করিম, পিএইচডি।
নবীন শিক্ষার্থীদের বরণ ও আলোচনা সভা :
সকাল ১১টা ৪০ মিনিটে মুক্তমঞ্চে ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষের নবীন শিক্ষার্থীদের কেন্দ্রীয়ভাবে স্বাগত জানানো হয়। উল্লেখ্য জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পরবর্তী সময়ে এবারই প্রথমবারের মতো নবীন শিক্ষার্থীদের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও ইনস্টিটিউটে প্রথম দিনেই তাদেরকে শিক্ষা সহায়িকা, আইডি কার্ড ও প্রাতিষ্ঠানিক মেইল আইডিসহ একটি ফোল্ডার সরবরাহ করা হয়েছে।
জুলাই বিপ্লবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশে অসংখ্য শহিদ শিক্ষার্থী ও জনতার রুহের মাগফিরাত কামনা করে আলোচনা সভায় উপাচার্য অধ্যাপক মোঃ রেজাউল করিম, পিএইচডি বলেন, “ বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থীদের অনেকেই এখনও চিকিৎসাধীন রয়েছে। তারা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুক এই কামনা করছি। তাদের জন্যই আজ আমরা স্বৈরাচারমুক্ত স্বাধীন দেশে বিচরণ করতে পারছি।”
তিনি নবীন শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন ও স্বাগত জানান। দেশ ও সমাজের কল্যাণে কাজ করার জন্য নিজেদেরকে উপযুক্ত হিসেবে গড়ে তোলোর নির্দেশনা দেন। জিএসটি ভর্তি প্রক্রিয়া দীর্ঘমেয়াদী হলেও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় সর্বপ্রথম আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু হচ্ছে বলে উপাচার্য মহোদয় অভিমত ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, “জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বহুবিধ সমস্যা থাকার পরও একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যাবলী গতিশীল করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি। আমাদের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসে দৃশ্যমান কোনো কাজ হয়নি, যার ফলে আমরা অবকাঠামোগতভাবে পিছিয়ে আছি। এসব নানাবিধ চ্যালেঞ্জকে মোকাবেলা করেই এগিয়ে যেতে হবে।”
এসময় কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. হোসনে আরা বেগম, বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোঃ মঞ্জুর মূর্শেদ ভূঁইয়া, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সানজিদা ফারহানা, আইন অনুষদের ডিন খ্রিষ্টিন রিচার্ডসন, চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোহাঃ আলপ্তগীন এবং বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে জবির আহত শিক্ষার্থী বক্তব্য প্রদান করেন।
আলোচনা সভাটি সঞ্চালনা করেন রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মোঃ শেখ গিয়াস উদ্দিন এবং সংগীত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নুসরাত জাহান প্রভা।
এছাড়াও নবীন শিক্ষার্থীদের মাঝে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দপ্তরের কার্যপরিধি বিষয়ক পরিচিতি তুলে ধরা।
দু’আ মাহফিল :
বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে বাদ যোহর জুলাই বিপ্লব ২০২৪ এর শহিদদের রুহের মাগফিরাত, আহতদের সুস্থতা এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক কল্যাণ কামনায় দু’আ মাহফিল আয়োজিত হয়। দু’আ মাহফিলের উপ-কমিটির আহবায়ক অধ্যাপক ড. মোঃ রইছ উদ্দীনের সভাপতিত্বে মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক মোঃ রেজাউল করিম, পিএইচডি।
এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দসহ অন্যান্য অতিথিবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান:
বেলা ৩ ঘটিকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্ত মঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসমূহের শুরুতে সংগীত বিভাগের তত্ত্বাবধানে শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং কর্মকর্তাবৃন্দের অংশগ্রহণে সংগীতানুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। এরপর নাট্যকলা বিভাগের প্রযোজনায় এবং ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের নির্দেশনায় জ্যাঁ পল সার্ত্রের মেন উইদাউট শ্যাডোজ অবলম্বনে ‘ছায়াহীন কায়া’ নাটক মঞ্চস্থ হয়। নাটকটিতে অভিনয় করেন বিভাগের বিভিন্ন আবর্তনের শিক্ষার্থীবৃন্দ। এছাড়াও আবৃত্তি সংসদের উদ্যোগে বিশেষ পরিবেশনা আয়োজিত হয়।
এসময় বশ্বিবদ্যিালয়রে বিভিন্ন অনুষদের ডিন, ইনস্টটিউিটরে পরচিালক, চেয়ারম্যান, রেজিস্ট্রার, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, প্রভোস্ট, প্রক্টর, বিভিন্ন দপ্তররে পরিচালক, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দসহ অন্যান্য অতথিবিৃন্দ উপস্থতি ছিলেন।