জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির উদ্যোগে ১১ জানুয়ারি ২০২৫, শনিবার সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে ‘জুলাই বিপ্লবে গণমাধ্যমের ভূমিকা ও পরবর্তী প্রত্যাশা’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
সেমিনারে প্রধান আলোচক হিসেবে ছিলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এবং বিশেষ আলোচক হিসেবে ছিলেন প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ।
প্রধান আলোচক প্রেস সচিব শফিকুল আলম তাঁর বক্তব্যে বলেন, “জুলাই বিপ্লবে গণমাধ্যম শুধু প্রতিবাদমুখর ছিল না বরং এটি জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করার প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করেছে। আমাদের মিডিয়া লিটারেসি বাড়ানো উচিত, যা অপসাংবাদিকতা রোধে উদ্যোগী হবে। জুলাই বিপ্লবে দেশের বিভিন্ন ক্যাম্পাসসহ বিভিন্ন স্থানে ফ্যাসিবাদদের দ্বারা ঘটে যাওয়া হত্যা, আঘাত সকল কিছু নিয়ে আমাদের লিখিত ডকুমেন্টারি তৈরি করতে হবে তাহলে ৭১’এর মতো এই আন্দোলনের ইতিহাস সহজেই কেউ বিকৃত করতে পারবে না।”
তিনি আরো বলেন, “জুলাই বিপ্লব পরবর্তীতে সাংবাদিকদের লেখার স্বাধীনতায় হাত দেয়া যাবে না। আর জুলাই স্পিরিটের মুল বিষয় হবে- যে কারো বিরুদ্ধেই রিপোর্ট হতে পারে, নতুন বাংলাদেশ তৈরিতে এটা মেনে নিতে হবে।”
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোঃ রেজাউল করিম, পিএইচডি। এসময় তিনি বলেন, “জুলাই বিপ্লবে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরব শহিদ সাজিদসহ অন্যান্য শহিদ ও আহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। গণমাধ্যমের ভূমিকা অনেক কিন্তু অনেক নেতিবাচক ভূমিকাও দেখেছি, বিভিন্ন গণমাধ্যমে সৈরাচারীদের বিষয়ে সংবাদ দেখতে পাই কিন্তু তার বাইরে বর্তমান সময়ের অনেক ভালো সংবাদ কম দেখতে পাই। এবিষয়ে আমাদের নজর দিতে হবে।”
প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ বলেন, “একাত্তরে দীর্ঘ নয় মাসের যুদ্ধে আমাদের ১৩ জন সাংবাদিক শহিদ হয়েছিলেন অথচ জুলাই বিপ্লবের শেষ কয়েকদিনে আমরা ৫ জন সাংবাদিক হারিয়েছি। এ থেকে বুঝা যায় ফ্যাসিবাদির দোসররা আর কিছুদিন সময় পেলে হয়তো আমরা ২৫’ মার্চের মতো আরেকটা কালরাত পেতাম আর সেটা অবশ্যই শিক্ষক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবিদের বিরুদ্ধেই হতো। ফ্যাসিবাদিদের সময়ে শিক্ষক, সাংস্কৃতিক সমাজ তাদের দোসর হিসেবে আবির্ভূত হয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসের মৃত্যু ঘটিয়েছিল। আমাদের নিজেদের মধ্যে অনৈক্যের কারণে ফ্যাসিবাদিদের দরজা আবার খুলে যাচ্ছে, একারণে সাধারণ জনগোষ্ঠির জন্য আমাদের ভিশন এক না হলে ভবিষ্যৎ আমাদের জন্য আত্মঘাতি হবে। সাংবাদিকরা লোভের মধ্যে গিয়ে ধ্বংস হয়েছিল এঘটনা যেনো পুনরায় না ঘটে। সাংবাদিকদের জনগণের সাথে সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে সঠিক তথ্য বের করে নিয়ে আসতে হবে।”
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি ইমরান হোসাইন এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. সাবিনা শরমীন এবং শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোঃ রইছ উদ্দীন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. সাবিনা শরমীন বলেন, “আমাদেরকে জুলাই বিপ্লবে শহিদদের ও আহতদের সংখ্যা নির্ধারণে সরাসরি তথ্য সংগ্রহ করে তা নিয়ে গবেষণা করা উচিত। সঠিকভাবে তথ্য সংগ্রহ না করার ফলে ৭১’ এর স্বাধীনতার এতো বছর পরও মুক্তিযুদ্ধে শহিদদের সংখ্যা এবং সঠিক ইতিহাস বিষয়ে বিতর্ক হচ্ছে।”
শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোঃ রইছ উদ্দীন বলেন, “ ৭১’এ স্বাধীনতা পরবর্তীতে বাকশালের মাধ্যমে যেভাবে গণমাধ্যমের টুঁটি চেপে ধরা হয়েছিল, ঠিক একইভাবে বিগত ফ্যাসিবাদি সরকারও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করেছিল। যেসকল সাংবাদিক ফ্যাসিবাদকে টিকানোর চেষ্টা করেছিল তাদের প্রত্যেকের মুঁখোশ উন্মোচন করা উচিত। ফ্যাসিবাদের দোসরদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় না আনতে পারলে আমাদের ঐক্যের মধ্যে তারা ফাটল ধরাবে।”
সেমিনারে বক্তারা জুলাই বিপ্লবে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ওরাল হিস্টোরি, ডকুমেন্টরি ও গবেষণাসহ বিশেষ প্রকাশনা তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহতাব হোসেন লিমন। অনুষ্ঠানের শুরুতে জুলাই বিপ্লবের শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সকলে দাঁড়িয়ে একমিনিট নীরবতা পালন করেন।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সাংবাদিকবৃন্দসহ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ অন্যান্য অতিথিবৃন্দ এসময় উপস্থিত ছিলেন।