জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) গ্লোবাল সাউথ স্টাডিজ এন্ড রিসার্চ সেন্টার (জিএসএসআরসি) এর আয়োজনে ‘ইরান বনাম ইসরায়েল-মার্কিন যুদ্ধ পরবর্তী: আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক প্রভাব’ শীর্ষক একাডেমিক আলোচনা ৩০ জুন ২০২৫ সোমবার) উপাচার্যের অফিস কনফারেন্স রুমে আয়োজিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোঃ রেজাউল করিম, পিএইচডি মুসলিম বিশ্বের অভ্যন্তরীণ ঐক্যের উপর জোর দিয়ে বলেন, "মুসলিম সম্প্রদায়কে শিয়া-সুন্নি বিভেদ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। অন্যান্য ধর্মীয় গোষ্ঠীর তুলনায় মুসলমানদের মধ্যে আন্তঃসম্প্রদায়িক বিরোধ বেশি লক্ষ্য করা যায়। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো যদি একত্রিতভাবে কাজ করে, তাহলে অনেক সংকটের সমাধান সম্ভব।"
এসময় প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নুরুজ্জামান। তিনি ইরানের ঐতিহাসিক বিপ্লব, বর্তমান মার্কিন-ইরান উত্তেজনা এবং মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনৈতিক সংকট নিয়ে বিস্তারিত বিশ্লেষণ উপস্থাপন করেন এবং ইরান ইস্যুতে বিভিন্ন শক্তির ভূমিকা ও সম্ভাব্য পরিণতি নিয়ে মূল্যায়ন করেন। তিনি উল্লেখ করেন, ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তার রাজনৈতিক টিকে থাকার জন্য ইরানকে 'বিপদ' হিসেবে উপস্থাপন করছেন, যা মধ্যপ্রাচ্যে নতুন সংকট তৈরি করছে। তিনি বলেন, "মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের কৌশলগত স্বার্থ মধ্যপ্রাচ্যে একত্রিত হয়েছে। তেল সম্পদ ও আঞ্চলিক আধিপত্য ধরে রাখতে ইরানকে ঘিরে সংকট তৈরি করা হচ্ছে।" এ প্রসঙ্গে ইয়েমেন, সিরিয়া ও লেবাননে চলমান সংঘাতের কথাও উল্লেখ করেন তিনি। এছাড়াও তিনি চীন ও রাশিয়ার ভূমিকা নিয়ে বলেন, "মার্কিন-ইসরাইলি চাপের বিপরীতে ইরান রাশিয়া ও চীনের কাছ থেকে কূটনৈতিক ও সামরিক সমর্থন পাচ্ছে। এটি মধ্যপ্রাচ্যে একটি নতুন শক্তি সমীকরণ তৈরি করছে, যা পশ্চিমা আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করছে।" তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, "এই সংঘাত যদি যুদ্ধে রূপ নেয়, তাহলে গোটা অঞ্চল অস্থিতিশীল হয়ে পড়বে, তেলের বাজারে ধস নামতে পারে এবং বৈশ্বিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।"
প্যানেল আলোচনায় ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বিলাল হোসাইন বলেন, "ইরানের ইসলামিক বিপ্লব-পরবর্তী সময় থেকেই ইসরাইলি আক্রমণের সূচনা। মুসলিম বিশ্বের অভ্যন্তরীণ বিভেদ ভুলে গিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে ইসরাইলি আগ্রাসন মোকাবিলা করতে হবে। 'ইসরাইলি ফোবিয়া'র ভিত্তিতে মুসলমানদের আর দীর্ঘদিন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না।"
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আনওয়ারুস সালাম বলেন, "আরব বিশ্বের অভ্যন্তরীণ বিভেদ অগ্রাহ্য করে চলমান সংকটের স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়।" এছাড়াও তিনি উল্লেখ করেন, "গণমাধ্যম যুদ্ধসংক্রান্ত তথ্য উপস্থাপনের মাধ্যমে জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, যা প্রায়শই নির্দিষ্ট এজেন্ডাকে প্রভাবিত করে।"
জিএসএসআরসি পরিচালক অধ্যাপক ড. মোঃ রইছ উদ্দীনের সভাপতিত্বে সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. সাবিনা শরমীন।
আলোচনার শুরুতে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন জিএসএসআরসি উপ-পরিচালক জনাব মেজবাহ-উল-আজম সওদাগর। মডারেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন জিএসএসআরসি উপ-পরিচালক ড. মোঃ আনিসুর রহমান।
আলোচনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।