logo

Copyright ©2024 Jagannath University. All Rights Reserved

News

জুলাই বিপ্লবের প্রথম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে পাবলিক লেকচার অনুষ্ঠিত

  • Published
  • 20 Jul, 2025
জুলাই বিপ্লবের প্রথম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারডিসিপ্লিনারি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কনসোর্টিয়াম (আইআরডিসি)-এর উদ্যোগে ১৭ জুলাই ২০২৫ (বৃহস্পতিবার) ‘জুলাই বিপ্লব ও আগামীর বাংলাদেশ’ শীর্ষক একটি বিশেষ লেকচারের আয়োজন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ সাজিদ ভবনের ৭১২ নম্বর কক্ষে অনুষ্ঠিত এ লেকচার উপস্থাপন করেন যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ড. মীর্যা গালিব।
প্রধান বক্তা হিসেবে ড. গালিব তাঁর বক্তব্যে জুলাই বিপ্লবের কারন, অর্জন ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিয়ে গভীর বিশ্লেষণ উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, জুলাই বিপ্লব ছিল দীর্ঘদিনের জমে থাকা গণঅসন্তোষের এক প্রলম্বিত বিস্ফোরণ। এর পেছনে ছিল রাজনৈতিক অবক্ষয়, গণতন্ত্রের সংকোচন ও অর্থনৈতিক দুর্নীতির মতো নানা কারন। তিনি উল্লেখ করেন, পরপর কয়েকটি নির্বাচনে ব্যাপক ভোট কারচুপি, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল এবং একটি অগণতান্ত্রিক শাসন কাঠামো প্রতিষ্ঠার ফলে জনগণের আস্থা বিনষ্ট হয়। পাশাপাশি, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ, বিরোধী নেতাকর্মীদের গুম ও হত্যার মতো রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্বজনপ্রীতি ও সিন্ডিকেট ব্যবস্থা বিস্তৃত হয়।
বিপ্লবের অর্জন প্রসঙ্গে ড. গালিব বলেন, এটি নাগরিক অধিকার, সংবাদমাধ্যম ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার একটি ঐতিহাসিক সুযোগ সৃষ্টি করেছে। তিনি আরো উল্লেখ করেন, ভবিষ্যতে একটি স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের জন্য একটি সুস্পষ্ট জুলাই ঘোষণাপত্র প্রণয়ন, দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ গঠন, স্বচ্ছ ভোটিং পদ্ধতির প্রচলন, বৈষম্যহীন সমাজব্যবস্থা এবং দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে তোলা অপরিহার্য।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোঃ রেজাউল করিম, পিএইচডি। তিনি বলেন, জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে আমরা আবারও রাষ্ট্র পুনর্গঠনের সুযোগ পেয়েছি। এ সুযোগ যেন কোনোভাবেই হারিয়ে না যায়। আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত একটি সুষ্ঠু, ন্যায়ভিত্তিক ও বৈষম্যহীনবাংলাদেশ গড়ে তোলা। এর জন্য প্রয়োজন সুশাসন, যোগ্য নেতৃত্ব এবং নাগরিক অধিকারের সুরক্ষা।
আলোচক হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোঃ সিদ্দিকুর রহমান খান বলেন, বাংলাদেশের জনগণ স্বভাবতই ন্যায়নিষ্ঠ ও গণতান্ত্রিক চেতনার পক্ষপাতী। জুলাই বিপ্লব কোনো একক নেতৃত্বের সৃষ্টি নয়, বরং এটি ছিল ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে গণমানুষের সম্মিলিত জাগরণ। তিনি রাজনৈতিক বিভাজনের সংস্কারকে বিপ্লবের স্থায়িত্বের জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করেন এবং বলেন, একটি টেকসই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির আমূল পরিবর্তন প্রয়োজন। সকল স্তরের মানুষের মধ্যে সমন্বিত দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলা আগামী দিনের বড় চ্যালেঞ্জ।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. সাবিনা শরমীন এবং শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মোঃ মোশাররফ হোসেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আইআরডিসি’র সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বিলাল হোসাইন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও আইআরডিসি’র সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক।
আলোচনায় বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, গবেষক ও শিক্ষার্থীরা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। লেকচারের পর প্রশ্নোত্তর পর্বের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি শেষ হয়।