জুলাই বিপ্লব ২০২৪ উদ্যাপন উপলক্ষ্যে ২৪ জুলাই ২০২৫, বৃহস্পতিবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) আইন ও ভূমি প্রশাসন বিভাগের আয়োজনে ‘জুলাই বিপ্লব ২০২৪’ ও ‘বৈষম্যহীন বাংলাদেশ (সুযোগ-সমস্যা-উত্তরণ)’ শীর্ষক এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সেমিনারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ সাজিদ অ্যাকাডেমিক ভবনের ৯১৪ নং কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোঃ রইছ উদ্দীন। তিনি বলেন, বৈষম্য থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্যই ১৯৭১ সালে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম। কিন্তু স্বাধীনতার পরও একটি ব্যক্তি ও একটি রাজনৈতিক দল পুরো কৃতিত্ব নিজেদের নামে নিয়ে নিয়েছিল, যা জাতি হিসেবে আমাদের জন্য অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। আজ আবারও সেই দল ও নেতৃত্বের বৈষম্যমূলক নীতির কারণে জুলাই বিপ্লব ২০২৪ সংঘটিত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, জুলাই বিপ্লব শুধুমাত্র একটি কোটা ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ছিল না, বরং এটি ছিল একটি সর্বজনীন গণঅভ্যুত্থান—দল-মত-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সাধারণ মানুষের ঐক্যবদ্ধ অংশগ্রহণে এই বিপ্লব সফল হয়েছে। জুলাইয়ে শহিদদের স্মরণে আমাদের মধ্যে ঐক্য বজায় রাখতে হবে এবং ‘জুলাই চেতনা’ ধারণ করে বৈষম্যহীন বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।
সেমিনারে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বিলাল হোসাইন। তিনি বলেন, বাঙালি জাতির ইতিহাস পাঁচ হাজার বছরের পুরনো। পৃথিবীতে অনেক জাতি রয়েছে যাদের এমন ইতিহাস নাই। ইতিহাসের বিভিন্ন সময়কাল পর্যালোচনা করে তিনি বলেন, ভাষা ও স্বাধীনতা এই দুইটি আমাদের জাতিসত্তার মূল ভিত্তি। এগুলোর ওপর আঘাত আসলেই আমাদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়ে। ২০২৪ সালের বিপ্লব ছিল আদর্শ ও চিন্তার পরিবর্তনের এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। আমাদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক পর্যায়ে সে পরিবর্তনের প্রতিফলন ঘটাতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ একটি সম্পদশালী রাষ্ট্র, কিন্তু এই সম্পদ ব্যবস্থাপনার সঠিক কৌশল ও নৈতিক রূপান্তর প্রয়োজন। জুলাই ২০২৪ সেই রূপান্তরের সূচনা করেছে। এখান থেকেই জাতিকে পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন আইন ও ভূমি প্রশাসন বিভাগের চেয়ারম্যান ড. শারমীন আখতার। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইন অনুষদের ডিন জনাব খ্রীষ্টিন রিচার্ডসন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক। এছাড়াও মূল আলোচক হিসেবে অংশগ্রহণ করেন নির্বাচন তদন্ত কমিশন ও জুডিশিয়াল রিফর্ম কমিশনের সদস্য এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জনাব কাজী মাহফুজুল হক সুপন।
সেমিনারে বিভাগের শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্টরা অংশগ্রহণ করেন। আলোচনায় জুলাই বিপ্লব ২০২৪-এর ঐতিহাসিক তাৎপর্য, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে এর প্রভাব, এবং একটি বৈষম্যহীন, ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে বিশদভাবে আলোচনা করা হয়।