জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ৪ আগস্ট ২০২৫ (সোমবার) ইতিহাস বিভাগের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হলো ‘জুলাই বিপ্লব ২০২৪: বৈষম্যহীন বাংলাদেশ (সম্ভাবনা–সংকট–উত্তরণ)’ শীর্ষক সেমিনার। বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সাজিদ একাডেমিক ভবনের ৭১২ নম্বর কক্ষে আয়োজিত এ সেমিনারে অংশগ্রহণ করেন বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং আমন্ত্রিত অতিথিরা।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. নাছির আহমাদ। তিনি তাঁর প্রবন্ধে ১৯৭২ সালে মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে প্রবর্তিত কোটা ব্যবস্থা, নির্বাহী আদেশে এর বাতিল ও পুনঃবাস্তবায়নসহ সংশ্লিষ্ট প্রেক্ষাপটের বিশ্লেষণ উপস্থাপন করেন। ড. নাছির আহমাদ কোটা সংস্কার আন্দোলনের বিবর্তনকে তিনটি পর্যায়ে ভাগ করে তুলে ধরেন এবং ২০২৪ সালের ১৪ জুলাই-পরবর্তী ফ্যাসিবাদীদের শিক্ষার্থীদের অহিংস আন্দোলনের ওপর আগ্রাসী হামলার কড়া সমালোচনা করেন। তিনি উল্লেখ করেন, “জুলাই বিপ্লবে দল-মত নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষ অংশগ্রহণ করেছিল। এটি কারো একক আন্দোলন নয়—এই আন্দোলনের স্টেকহোল্ডার আমরা সবাই।”
মূল প্রবন্ধে তিনি আরো বলেন, ১৯৪৭ সালের দেশভাগ, ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, ২০০৯-এর অভ্যুত্থান ও ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লব—সবকটিই বৈষম্যের বিরুদ্ধে পরিচালিত হয়েছে।
সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোঃ রইছ উদ্দীন। তিনি বক্তব্যে জুলাই বিপ্লব চলাকালীন শিক্ষার্থীদের ওপর ফ্যাসিবাদীদের নির্বিচার হামলার প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নীরব ভূমিকার কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, “সেসময় বিশ্ববিদ্যালয়ে মাত্র ১৭ জন শিক্ষক শিক্ষার্থীদের পক্ষে ব্যানার হাতে দাঁড়িয়েছিলেন। বাকিদের দায় এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।” তিনি ইতিহাস বিকৃতির জন্য কিছু ইতিহাসবিদের ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ করেন এবং বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের কৃতিত্ব এক ব্যক্তি বা এক দলের বলে প্রতিষ্ঠিত করার প্রচেষ্টায় ইতিহাসের অপব্যাখ্যা হয়েছে। ইতিহাসবিদদের এ দায় এড়ানোর সুযোগ নেই।”
তিনি আরও বলেন, “ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে কারো পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান গোপন রাখা যাবে না। নতুন কোনো ফ্যাসিবাদ না চাইলে, অতীতের ফ্যাসিবাদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। ইতিহাস বিকৃতির সুযোগ যেন কেউ না পায়, ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থীদের সে বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।”
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক ড. আবুল কালাম সরকার।
আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বিলাল হোসাইন। তিনি বলেন, অনেকেই মন্তব্য করে জুলাই বিপ্লব ছিল একটি ‘ম্যাটিকুলাস ডিজাইন’ অর্থাৎ পরিকল্পিত ও সুসংগঠিত বিপ্লব। পৃথিবীর সকল সফল বিপ্লবই পরিকল্পিতভাবে সংঘটিত হয়েছে। গত সাড়ে পনেরো বছর ধরেই ফ্যাসিবাদ বিরোধী সকলের মনের মাঝে এই ডিজাইন হচ্ছিল।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন অধ্যাপক ড. মোঃ মামুনুর রশীদ এবং সভাপতিত্ব করেন ইতিহাস বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মুর্শিদা বিনতে রহমান।
সেমিনারে বক্তারা সবাই বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের লক্ষ্যে জুলাই বিপ্লবের তাৎপর্য ও শিক্ষা তুলে ধরেন এবং ইতিহাসকে সঠিকভাবে সংরক্ষণ ও উপস্থাপনের ওপর জোর দেন।