logo

Copyright ©2024 Jagannath University. All Rights Reserved

News

জবি ও আশপাশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংলগ্ন এলাকায় অবৈধ দোকানপাট, লেগুনা ও বাসস্ট্যান্ড অপসারণে প্রতিবাদ সমাবেশ ও অবস্থান কর্মসূচি পালিত

  • Published
  • 15 Sep, 2025
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ও অত্র এলাকার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আয়োজনে এবং জবি শিক্ষক সমিতির সমন্বয়ে আজ ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও বাহাদুর শাহ পার্ক সংলগ্ন এলাকা থেকে অবৈধ দোকানপাট, লেগুনা ও বাসস্ট্যান্ড অপসারণের দাবিতে এক প্রতিবাদ সমাবেশ ও অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়।
এই কর্মসূচিতে জবি’র শিক্ষক সমিতি, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিক সংগঠনসমূহের প্রতিনিধি, জবি সংলগ্ন বাহাদুর শাহ পার্ক এলাকার আশপাশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিপুল সংখ্যক অংশগ্রহণকারী উপস্থিত ছিলেন। কর্মসূচি পরিচালনার সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন জবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোঃ রইছ উদ্‌দীন।
সমাবেশ থেকে অধ্যাপক ড. রইছ উদ্‌দীন মূলত তিনটি ঘোষণা উত্থাপন করেন। প্রথমত, রায়সাহেববাজার থেকে আর কোনো বাস বা লেগুনা এই এলাকায় প্রবেশ করবে না। পরীক্ষামূলকভাবে চালু থাকা লেগুনা ও বাসস্ট্যান্ড অপসারণ এখন থেকেই স্থায়ীভাবে কার্যকর করা। দ্বিতীয়ত, আগামী দুই ঘণ্টার মধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও বাহাদুর শাহ পার্ক সংলগ্ন এলাকা থেকে শুরু করে কবি নজরুল সরকারি কলেজ হয়ে সরোওয়ার্দী কলেজ পর্যন্ত সব অবৈধ দোকানপাট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসের তত্ত্বাবধানে এবং পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতায় অপসারণ। তৃতীয়ত, আজ থেকে বাহাদুর শাহ সড়কের এই চত্বরকে ‘বিশ্বজিৎ চত্বর’ হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হলো। কারন বিশ্বজিৎ হলো ফ্যাসিবাদবিরোধী এক ঐতিহাসিক মাইলফলকের নাম, আর এই চত্বরকে ঘিরেই পুরান ঢাকা ও জবির সকল ধরণের আন্দোলন ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হবে।
তিনি আরো বলেন, পরিবহন ও দোকানপাটের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আমাদের শত্রু নন। তাদের অনেকের সন্তান বর্তমানে এ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত বা ভবিষ্যতে অধ্যয়ন করবে। সুতরাং একটি সুন্দর ও সুশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরিতে তাদেরও দায়িত্ব রয়েছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও বাহাদুর শাহ পার্ক সংলগ্ন এলাকা থেকে অবৈধ দোকানপাট, লেগুনা ও বাসস্ট্যান্ড অপসারণের মধ্য দিয়ে আমরা সকলে মিলে একটি সুন্দর ও নৈতিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে চাই।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক সমাবেশে বলেন, আমাদের দীর্ঘদিনের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী এই পরিবহনগুলো এ এলাকায় নিরাপত্তার জন্য চরম সংকট তৈরি করছে। গত এক বছর ধরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে নানা অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটছে। এ পরিস্থিতি আর চলতে দেওয়া যায় না। আমাদের দাবি এবং সবার অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আজ থেকে রায়সাহেববাজার থেকে কোনো গাড়ি চূড়ান্তভাবে এই এলাকায় প্রবেশ করবে না। এর ব্যত্যয় ঘটলে এবং কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটলে তার দায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নেবে না। তিনি আরও বলেন, ফুটপাতে দোকানপাট বসে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও পার্কসহ পুরো এলাকার সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে, তাই এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে।
কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন জবি শিক্ষক সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. মোঃ আজম খান।
সমাবেশে বক্তব্য প্রদান করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশ্ববর্তী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বাংলা বাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, হিড ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, সেন্ট গ্রেগরী হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ, পোগোজ ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ, কলেজিয়েট স্কুল, ঢাকা আইনজীবী সমিতি এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন, সাংবাদিক সংগঠন এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থী প্রতিনিধিরাও বক্তব্য প্রদান করেন।
বক্তারা উল্লেখ করেন, এই এলাকা বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসম্বলিত একটি ঐতিহ্যবাহী এলাকা। এখানে শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখা না গেলে শিক্ষার্থীরা বিকশিত হতে পারবে না। তাই পারস্পরিক সহযোগিতা বজায় রেখে রায়সাহেববাজার থেকে এই এলাকায় কোনো বাস বা লেগুনা প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না, এ বিষয়ে সবাই একমত। বক্তারা আরও বলেন, এ দাবিগুলো আজকের নয়; বরং প্রতিনিয়তই শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও স্থানীয়রা এ দাবিগুলো তুলে আসছেন। সম্প্রতি পরীক্ষামূলকভাবে যে ব্যবস্থা চালু হয়েছিল, যেখানে বাসগুলো রায়সাহেববাজার থেকে গোয়ালঘাট হয়ে গন্তব্যে যাচ্ছিল,আজ থেকে তা স্থায়ী করা হলো। এ বিষয়ে সবাইকে সোচ্চার থাকার আহ্বান জানান তারা। এছাড়া ফুটপাত থেকে টং দোকান উচ্ছেদের দাবিও জোরালোভাবে উত্থাপিত হয়। বক্তারা বলেন, এসব দোকানকে ঘিরে মাদক সেবনকারীদের আড্ডা, ব্যবসা এবং চুরি-ছিনতাইয়ের মতো অপরাধ ঘটে থাকে। তাই সবার নিরাপত্তার স্বার্থে এসব দোকানপাট সরিয়ে ফেলা জরুরি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে সুষ্ঠু পরিবেশ ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বজায় রাখার ওপর বক্তারা বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন।
সমাবেশ থেকে ঘোষণা করা হয় যে, আজকের এই কর্মসূচি শেষে অংশগ্রহণকারীদের স্বাক্ষরিত দাবিসম্বলিত একটি স্মারকলিপি ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পুলিশ কমিশনার বরাবর প্রদান করা হবে।
কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভাগীয় চেয়ারম্যান, দপ্তরের পরিচালক, শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং পাশ্ববর্তী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।