পবিত্র ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী (সা.) উদ্যাপন উপলক্ষ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা আয়োজনে দিনটি উদ্যাপিত হয়েছে। ঈদ-ই- মিলাদুন্নবী উদ্যাপন কমিটির আয়োজনে ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ (রবিবার) সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে আলোচনা সভা, বিভিন্ন প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ এবং বাদ জোহর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।অনুষ্ঠানের উদ্বোধন ঘোষণা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক মোঃ রেজাউল করিম, পিএইচডি।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। তিনি বলেন, সীরাতে রাসুল (সা.) এক কালজয়ী আদর্শ। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর আদর্শের আলোকে সমগ্র পৃথিবী আলোকিত হয়েছিল, জাহিলিয়াতের অন্ধকার দূর হয়েছিল। কিন্তু দুঃখজনকভাবে আজকের যুগে আমরা বাইরের আচার-আচরণ ও বাহ্যিক জ্ঞানার্জনে যতটা মনোযোগী, অন্তরের চালচলন ও জীবনধারায় সীরাত ও সুন্নাতের প্রভাব ততটা প্রতিফলিত হচ্ছে না। রাসুল (সা.)-এর জীবন বিধান ও দিকনির্দেশনা আধুনিক যুগেও অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। আল-কোরআনের আলোকে প্রণীত পৃথিবীর প্রথম লিখিত সংবিধান, নারীর অধিকার ও সম্মান প্রতিষ্ঠা, বর্ণ ও জাতিগত বৈষম্য নিরসন, উত্তরাধিকার আইন, নারী শিক্ষা—এসব ক্ষেত্রেই নবীজীর দিকনির্দেশনায় সেই সময়েও আধুনিকতার ছোঁয়া বিদ্যমান ছিল। তাই আমাদের প্রত্যেককে সীরাত ও সুন্নাতকে নিজেদের জীবনে কার্যকর করার আন্তরিক প্রচেষ্টা চালাতে হবে। নবীজীর জীবনাদর্শ বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমাদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে সত্যিকার পরিবর্তন আসবে।
উদ্বোধনী বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক মোঃ রেজাউল করিম, পিএইচডি বলেন, আজকের এই আয়োজন কেবল একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি এক মহৎ শিক্ষামূলক উদ্যোগ। এ অনুষ্ঠান আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর আগমনে পৃথিবী কিভাবে আলোকিত হয়েছিল। তাঁর জীবনাদর্শ ও চরিত্র থেকে আমরা কতটা শিক্ষা গ্রহণ করছি এবং কতটা তা বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হচ্ছি—এই আয়োজন তারই প্রতিফলন। আমাদের শিক্ষার্থীরাই আমাদের ভবিষ্যৎ। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘জ্ঞানার্জন প্রত্যেক মুসলিম নর নারীর জন্য জরুরি।’ তাই জ্ঞানচর্চার মাধ্যমেই আমাদের জীবন হবে সমৃদ্ধ। নবীর আদর্শকে অনুসরণ করলে সততাই আমাদের শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটি ও অনুষ্ঠান উদ্যাপন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোঃ রইছ উদ্দীন-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. সাবিনা শরমীন, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক জনাব আঃ ছালাম খান এবং জবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মোঃ মোশাররাফ হোসেন।
বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ মুফতি আব্দুল মুনয়িম খাঁন তাঁর আলোচনায় রাসুল (সা.)-এর সীরাত নিয়ে বিস্তারিত পর্যালোচনা উপস্থাপন করেন। তিনি নবী করিম (সা.)-এর জীবনাদর্শ, সাহাবীগণের আমল এবং তাঁদের জীবন বার্তা নিয়ে সুস্পষ্ট বিশ্লেষণ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আমাদের প্রত্যেককে রাসুল (সা.)-কে হৃদয়ে ধারণ করতে হবে এবং তাঁর আদর্শকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বাস্তবায়ন করতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. সাবিনা শরমীন বলেন, আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) সমগ্র মানবজাতির জন্য আলোর দিশারী হিসেবে আগমন করেছিলেন। তিনি আমাদের জন্য যে জীবনদর্শন রেখে গিয়েছেন, যে নির্দেশনা প্রদান করেছেন, যে বিষয়ে অনুমতি দিয়েছেন কিংবা যে বিষয়ে মৌন সম্মতি দিয়েছেন—প্রত্যেকটি দিক-নির্দেশনাই আমাদের জন্য চিরন্তন আলোকবর্তিকা। এই বার্তাগুলো কেবল সেই সময়ের জন্য সীমাবদ্ধ ছিল না; বরং যুগে যুগে, অনন্তকাল পর্যন্ত সমগ্র মানবজাতির জন্যই তা অনুকরণীয় ও আদর্শ হিসেবে বিরাজ করবে।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. মোঃ রইছ উদ্দীন বলেন, অতীতে ঈদ-ই মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে র্যালি করতে গিয়ে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫ জন শিক্ষার্থী পুলিশ কর্তৃক গ্রেফতার হয়েছিল এবং সীরাতুন্নবী মাহফিল আয়োজনের কারণে শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারও করা হয়েছিল। এটি আমাদের অতীতের ইতিহাস ও অভিজ্ঞতার অংশ। তবে ৫ আগস্ট মহান রাব্বুল আলআমিনের অসীম দয়ার ফলে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে যে সুযোগ আমরা লাভ করেছি, আজকের এই আয়োজন সেই সুযোগকে বাস্তবায়নের অংশ। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থী মুসলিম। তাই তাঁদের জন্য মুহাম্মাদুর রাসুল (সা.)-এর জীবনাদর্শের আলোচনার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কোনো একাডেমিক আলোচনা হতে পারে না। সবার উচিত এ ধরনের আয়োজনের গুরুত্ব অনুধাবন করা এবং তা যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মোঃ শেখ গিয়াস উদ্দিন।
এবারই প্রথম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয়ভাবে বৃহৎ আয়োজনে ঈদ-ই মিলাদুন্নবী (সা.) উদ্যাপন করেছে। এর আগে গত সপ্তাহে জবি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির আয়োজনে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন। কিরাত প্রতিযোগিতায় প্রথম হন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী মুহাম্মদ রাকিবুল করিম, দ্বিতীয় হয় ইতিহাস বিভাগের তাহেরা মাহমুদ তোহা ও যুগ্মভাবে ৩য় হয় বাংলা বিভাগের কাজী সাদিয়া ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের মাবরুর বিন মাসউদ; নাতে রাসুল (সা.) প্রতিযোগিতায় প্রথম হন ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী সুমাইয়া হক বৃষ্টি, ২য় হন আইন বিভাগের মাঈন আল মুবাশ্বির ও ৩য় হন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের মুহাম্মদ রাকিবুল করিম; রচনা প্রতিযোগিতায় প্রথম হন ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল মামুন, ২য় হন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের রুকাইয়া মিজান মিমি ও ৩য় হন গণিত বিভাগের মোঃ সামিন রেজা সিয়াম; এবং ইসলামিক ক্যালিওগ্রাফি প্রতিযোগিতায় প্রথম ও ২য় হন যথাক্রমে ড্রইং অ্যান্ড পেইন্টিং বিভাগের নূর এ জান্নাত মিম ও ফাহিম ফয়সাল এবং ৩য় হন প্রিন্ট মেকিং বিভাগের তাসিন আহমেদ আলফি। প্রতিটি ক্যাটাগরিতে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকারীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন অতিথিবৃন্দ।
আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণের পর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে বাদ জোহর মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।